ওমর সিরিজ হলো একটি ঐতিহাসিক সিরিজ যা ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে আল-খাত্তাবের জীবনী নিয়ে নির্মিত। ওমর সিরিজটি ২০১২ সালে প্রথম প্রচারিত হয়েছিল এবং এটি দ্রুতই দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিরিজটি তার সঠিক ও তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।
পর্বঃ ২১ (পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) – হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর আরব ভূখণ্ডের বাইরে ইসলামের বিস্তারের জন্য খলিফা হযরত আবু বকর (র.) বিভিন্ন অভিযানের পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে একটি ছিল পারস্যের বিরুদ্ধে অভিযান।
পারস্য ছিল আরব ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছিল একটি কঠিন কাজ।
হযরত আবু বকর (র.) এই অভিযানের জন্য একজন দক্ষ সেনাপতি নির্বাচন করেন। তিনি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীকে পারস্যের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।
পর্বঃ ২২ (ওমর রাঃ এর খিলাফত গ্রহণ) – হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর খলিফা হযরত আবু বকর (র.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী আরব ভূখণ্ডের বাইরে ইসলামের বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অভিযান চালায়। এর মধ্যে একটি ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান।
বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ছিল একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছিল একটি কঠিন কাজ। কিন্তু, হযরত আবু বকর (র.) ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি বুঝতে পারলেন যে, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করলে ইসলামের বিস্তার ত্বরান্বিত হবে না।
মুসলিম সেনাবাহিনী বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অন্যদিকে, খলিফা আবু বকর অসুস্থ ছিলেন এবং তিনি তাঁর পরামর্শদাতাদের নতুন খলিফা নির্বাচনের পরামর্শ দেন।
পর্বঃ ২৩ (ইয়ারমুকের যুদ্ধ) –
তার খিলাফতের শুরুতে তিনি ইসলামের বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীকে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।
মুসলিম বাহিনী বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তে পৌঁছলে, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সেনাপতিদের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। এই বিজয় মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল। এই বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং ইসলামের বিস্তার ত্বরান্বিত হয়।
এই বিজয়ের পর হযরত উমর (র.) আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তিনি ইসলামের বিস্তার ও উন্নতিতে আরও বেশি মনোযোগ দেন
পর্বঃ ২৪ (সিরিয়ায় যুদ্ধ) – হযরত উমর (র.) ছিলেন একজন দূরদর্শী ও যোগ্য নেতা। তিনি খলিফা হিসেবে ইসলামের বিস্তার ও উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তার খিলাফতের শুরুতেই তিনি ইসলামের বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনি বিচার বিভাগের জন্য একজন যোগ্য প্রধান নিযুক্ত করেন। তিনি বিচারকদের জন্য কঠোর নিয়মকানুন প্রণয়ন করেন। তিনি বিচারকদেরকে ইসলামী আইন অনুসারে বিচার করার নির্দেশ দেন।
হযরত উমর (র.) এর এই পদক্ষেপের ফলে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়। মুসলমানদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।
পর্বঃ ২৫ (হযরত উমর (র.): ন্যায়বিচার ও সাহায্যের মহিমা) – হযরত উমর (র.) ছিলেন একজন দূরদর্শী ও ন্যায়পরায়ণ খলিফা। তাঁর শাসনামলে ইসলামের বিস্তার ও উন্নয়নের পাশাপাশি, ন্যায়বিচার ও জনগণের কল্যাণের প্রতি অবিচল দৃষ্টি ছিল।
একদিন, মুসলিম বাহিনীর একটি ছোট্ট দল পারস্যের বিদ্রোহীদের কৌশলে ফেলে পরাজিত হয়। এই সংবাদ পেয়ে হযরত উমর (র.) অবিলম্বে সাহায্য বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, তাঁর দৃষ্টি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি জানতেন, একজন নেতার দায়িত্ব শুধু শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নয়, বরং নিজের প্রজাদের কল্যাণেরও নিশ্চিত করা।
এই সময়েই তিনি তার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের সাথে আলোচনা করে, তিনি রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
পর্বঃ ২৬ (দামেস্ক বিজয়) – মুসলিম বাহিনী দামেস্ক শহরের কাছে পৌঁছালে, তারা শহরটি অবরোধ করে। দামেস্ক শহর ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহরটি জয় করলে, মুসলমানদের বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে প্রবেশের পথ সুগম হবে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি। তিনি বুঝতে পারলেন যে, দামেস্ক শহর অবরোধ করে জয় করা কঠিন হবে। কারণ, শহরটি ছিল শক্তিশালী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।
এদিকে, শহরের ভেতর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছিল শক্তিশালী। শহরের গভর্নর ছিলেন একজন দক্ষ ও সাহসী ব্যক্তি। তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
পর্বঃ ২৭ (কাদিসিয়ার যুদ্ধ) –
উমর রাঃ তার বাহিনীকে আরব সীমান্তে পিছু হটতে নির্দেশ দেন এবং মেসোপটেমিয়ায় আরেকটি অভিযানের জন্য মদিনায় সৈন্য সংগ্রহ শুরু করেন।
উমর রাঃ সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে একজন সম্মানিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। ৬৩৬ সালের মে মাসে সাদ তার সেনাবাহিনী নিয়ে মদিনা ত্যাগ করেন এবং জুন মাসে কাদিসিয়ায় পৌঁছান।
পর্বঃ ২৮ (মাদাইনের যুদ্ধ)- মুসলিম সেনাবাহিনী পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং পারস্যের শহরগুলো দখল করে নেয়। এটি ছিল মুসলিম ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি মুসলমানদের সামরিক শক্তির প্রদর্শন এবং তাদের বিজয়ের যুগের সূচনা।
খলিফা ওমর মুসলমানদের মধ্যে লুণ্ঠনের মাল ন্যায্যভাবে বণ্টন করার চেষ্টা করেন
খলিফা ওমর ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসক। তিনি মুসলমানদের মধ্যে লুণ্ঠনের মাল ন্যায্যভাবে বণ্টন করার চেষ্টা করেন। এটি ছিল তার ন্যায়পরায়ণতার একটি প্রমাণ।
পর্বঃ ২৯ (দুর্ভিক্ষের বছর) – একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের বছর আসে। খরা, বন্যা, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হয়। খাদ্যের দাম বেড়ে যায় এবং জনগণ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়। খলিফা ওমর এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ নেন। তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্য করার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের মধ্যে বণ্টন করেন। তিনি দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধান করেন এবং এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন।
খলিফা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ নেন। তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্য করার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের মধ্যে বণ্টন করেন। তিনি দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধান করেন এবং এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন।
পর্বঃ ৩০ (খলিফা ওমরের শেষ দিন) – একদিন মদিনার বাজারে একজন পারস্য দাস এসে উপস্থিত হয়। তিনি ছিলেন একজন যুদ্ধবন্দী, যিনি মুসলমানদের দ্বারা বন্দী হন। দাসটি ছিল একজন সুদর্শন যুবক, তবে তার চোখে ছিল একটা অদ্ভুত দৃষ্টি। যেন তার মনের মধ্যে কিছু ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।
দাসের চেহারা ছিল সুদর্শন। তার চোখ ছিল কালচে সবুজ রঙের এবং তার চোখের মধ্যে ছিল একটা অদ্ভুত দৃষ্টি। যেন তার মনের মধ্যে কিছু ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। তার আচরণ ছিল রহস্যময়। তিনি কথা বলতেন সাবধানে এবং তার কথায় ছিল একটা লুকানো অর্থ। তিনি মদিনার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন এবং মানুষের সাথে কথা বলতেন। তিনি কী করছিলেন এবং তিনি মদিনায় কী করতে চান তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তার আচরণ থেকে বোঝা যায় যে তার উদ্দেশ্য ভালো মনে হচ্ছে না।
মদিনার লোকেরা এই দাসের আচরণে সন্দেহ পোষণ করে। তারা তাকে একজন গুপ্তচর বলে মনে করে। তারা খলিফা ওমরকে এই বিষয়ে অবহিত করে। খলিফা ওমর এই দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দাস প্রথমে কথা বলতে চায় না। কিন্তু খলিফার চাপের মুখে সে কথা বলে। সে জানায় যে সে একজন পারস্য গুপ্তচর। সে মদিনায় এসে মুসলমানদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এসেছে।
পর্বঃ ৩১ (প্লেগ, মিশর বিজয় এবং উমরের মৃত্যু) –
হজ শেষে ওমর আবার মদিনায় ফিরে আসেন। তারপর ওমর রাঃ ফজরের সালাত এর সময় পারস্য থেকে আসা পিরুজ নাহাভান্দি নামে একজন আক্রমন করে।
ওমর রাঃ আক্রমণের ৩ দিন পরে মারা যান এবং তার মৃত্যুর আগে ৬ জনকে নতুন খলিফা নির্ধারণের পরামর্শ দেন।
ওমর রাঃ এর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও আবু বকরের রাঃ পাশে দাফন করা হয়।