ওমর সিরিজ হলো একটি ঐতিহাসিক সিরিজ যা ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে আল-খাত্তাবের জীবনী নিয়ে নির্মিত। ওমর সিরিজটি ২০১২ সালে প্রথম প্রচারিত হয়েছিল এবং এটি দ্রুতই দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিরিজটি তার সঠিক ও তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।
পর্বঃ ১১ (বদরের যুদ্ধ) – হিজরতের দ্বিতীয় বছরে, নবী মুহাম্মদ (সা.) এর অনুমতিক্রমে, মুসলমানরা মক্কার কুরাইশদের কাফেলা লুট করার চেষ্টা করে। এই কাফেলাগুলোতে কুরাইশদের ধন-সম্পদ ছিল। এই ঘটনার ফলে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
পর্বঃ ১২ (বদর যুদ্ধের বন্দী) – বদর যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত কুরাইশদের অনেক বন্দি করে। মুসলমানরা এই বন্দিদের সাথে মানবিক আচরণ করে। কুরাইশরা বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করে।
পর্বঃ ১৩ (উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ) – বদর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানদের একজন প্রিয়জন শহীদ হয়। উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পর্বঃ ১৪ (হুদায়বিয়ার সন্ধি) – খাইবার যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় অর্জন করে। কুরাইশরা মুসলমানদেরকে মক্কায় উমরাহ পালনে বাধা দেয়। মুসলমানরা কুরাইশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি করে।
পর্বঃ ১৫ (আবু বাসির) – হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘটায়। তবে এই সন্ধিতে কিছু শর্ত ছিল, যা প্রথমদিকে মুসলমানদের কাছে অসুবিধাজনক মনে হয়েছিল। হযরত উমর (রা.) এসব শর্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশ মেনে নেন।
সময়ের পরিক্রমায় দেখা যায়, যেসব শর্ত মুসলমানদের জন্য অসুবিধাজনক মনে হচ্ছিল, সেগুলো আসলে তাদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শান্তি প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলমানরা শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও, তারা আরবের বিভিন্ন রাজাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়।
এই ঘটনা হযরত উমর (রা.) এর চিন্তার মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে থাকে। তিনি বুঝতে পারেন যে, অল্লাহর নবীর নির্দেশ প্রশ্নবিহীন মেনে নেয়া উচিত, কারণ তার সিদ্ধান্ত সবসময়ই উত্তম।
এক বছর পর মুসলমানরা মক্কায় উমরাহ পালন করার সুযোগ পায়। এই উমরাহ মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং মক্কার লোকজনের মধ্যে ইসলামের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।
পর্বঃ ১৬ (খালিদ ও আমর এর ইসলাম গ্রহণ) – হুদায়বিয়ার সন্ধির পর শান্তির সুর বেজে চলছিল এমন সময়ে, একটি দুঃখজনক ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করে। এক মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতাধীন গোত্রের উপর আক্রমণ চালায় অন্য একটি বহুঈশ্বরবাদী গোত্র, যারা মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতাধীন। এই নির্মম আক্রমণ তৎক্ষণাত উষ্ণ করে তোলে মদীনার উষ্ণ বাতাসকে।
আক্রান্ত গোত্রের নেতা হতাশা ভারাক্রান্ত মনে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর দ্বারে আশ্রয় চায়। এদিকে, ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে আবু সুফিয়ান ঘটনার মীমাংসায় এগিয়ে আসেন। হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গের ভয় তাকে সতর্ক করে দেয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) গভীর চিন্তারের পর মক্কা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন।
পর্বঃ ১৭ (রাসূলাল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যু) – মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের বিজয়ের পতাকা আরব ভূখণ্ডের সর্বত্র উড়তে শুরু করে। মক্কার শক্তিশালী কুরাইশ গোত্র ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের বিজয়ের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করে।
আবু সুফিয়ান, যিনি ইসলামের শক্ত বিরোধিতা করেছিলেন, তিনিও মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয়ের পথ আরও সুগম হয়।
পর্বঃ ১৮ (আবু বকর (র.) খিলাফতের দায়িত্ব) –
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কিছু মুনাফিক ইসলামের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন ছলচাতুরি করতে থাকে। তারা দাবি করে যে, নবীজি (স.) এর ইন্তেকালের পর ইসলামের নির্দেশাবলী পালন করার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা নবীজি (স.) এর উত্তরসূরি নিয়েও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, কিছু মুসলমান খোলাখুলিভাবে খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা দাবি করে যে, তারা খলিফার অধীনে জীবনযাপন করতে চায় না। তারা খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও হযরত আবু বকর (র.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তিনি মুনাফিকদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেন।
পর্বঃ ১৯ (সাজহের উত্থান) – হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর আরব ভূখণ্ডে নকল নবী ও দাবিদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তারা ইসলামের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে। তারা দাবি করে যে, তারা নবীজি (স.) এর উত্তরসূরি। তারা মুসলমানদেরকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে।
এই নকল নবী ও দাবিদারদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সংগ্রাম শুরু হয়। তারা এই নকল নবী ও দাবিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
হযরত আবু বকর (র.) ছিলেন একজন দক্ষ নেতা। তিনি এই নকল নবী ও দাবিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এই বাহিনীতে হযরত উমর (র.) ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
পর্বঃ ২০ (মুসায়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধ) – হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর আরব ভূখণ্ডে নকল নবী ও দাবিদারদের উত্থান ঘটলে, খলিফা হযরত আবু বকর (র.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এই যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী একের পর এক বিজয় অর্জন করে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জয়ের জন্য অপরিহার্য।
হযরত আবু বকর (র.) খালিদ বিন ওয়ালিদ (র.) এর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখতেন। তাই তিনি তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।